দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের মধ্যদিয়ে টানা চতুর্থবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর প্রথম বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। আগামী বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’-শীর্ষক এই বাজেট ঘোষণা করা হবে। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হতে পারে প্রায় আট লাখ কোটি টাকা। নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী নিজের প্রথম বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। মূল্যস্ফীতি ও বৈশ্বিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে এবারের বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করছে সরকারি দলটি।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা ৪ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গণতান্ত্রিক ধারা ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখে জনকল্যাণমুখী ও সুসমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে সমতা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক দেশ বিনির্মাণের পথে জাতিকে অগ্রসরমান রেখেছে। ইতোমধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি টেকসই ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। ২০২৬ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা শুরু হবে। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাজেট নিয়ে হতাশার কিছু নেই। তিনি বলেন, জনগণের প্রত্যাশা পূরণে এ বাজেট অনন্য সাধারণ দলিল। বাজেটে কোথাও নেতিবাচক কোনো বিষয় নেই। এটা জনবান্ধব পজেটিভ বাজেট। তিনি আরও বলেন, যারা বাজেট নেগেটিভ দৃষ্টিতে দেখছে, তাদের বেলায় এ লাইনটি প্রযোজ্য-যারে দেখতে নারী, তার চলন বাঁকা। মূলত, তারা আওয়ামী বিদ্বেষ থেকে মনগড়া বাজেট নিয়ে বিরূপ মন্তব্য ও বিদ্বেষমূলক কথা বলছেন। সম্প্রতি বাজেট নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, গত ১০ বছর ধরে বিএনপি প্রত্যেকটা বাজেট সম্পর্কে এ ধরনের মনোভাব দেখিয়েছে। কিন্তু প্রতিটা বাজেটই বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উপনীত হতে যাচ্ছে। বাজেট নিয়ে তাদের বিরূপ সমালোচনা মনগড়া গতানুগতিক। এটা তাদের নেগেটিভ রাজনীতি, নেগেটিভ মানসিকতারই প্রতিফলন। তিনি দাবি করেন,প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, অদম্য তারুণ্য, প্রতিবন্ধীসহ অনগ্রসর মানুষের কাছে এ বাজেট পৌঁছে গেছে। তাদের স্বপ্ন পূরণেই এ বাজেট। সরকার বাজেট বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন সবসময় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ আমরা গ্রহণ করবো। বাজেট বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার সরকারের নতুন মন্ত্রিসভা নতুন স্পিরিট নিয়ে এ চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করবে। একইসুরে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবিন নানক। তিনি বলেন, বৈশ্বিক সংকটের কথা বিবেচনায় নিয়ে নতুন অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ছয় শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণসহ রিজার্ভ ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর বিষয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মূল্য কমিয়ে নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। তবে সবমিলিয়ে সরকার বাজেট বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, বাজেট করার ক্ষেত্রে সবসময়ই জনগুরুত্বটা, জনগণের চাহিদা, জনগণের প্রত্যাশা এগুলোকে পূরণ করার লক্ষ্য নিয়েই বাজেটটা প্রণয়ন করা হয়। যদিও এবার অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে। মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বৈশ্বিক কারণ, করোনা, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামলা-অস্থিরতা, ইরান, পাকিস্তান সবকিছু মিলিয়েই তো একটা অস্থিরতা হচ্ছে। তিনি বলেন, সেই বিবেচনায় বাজেট প্রণয়ন করে মূল্যস্ফীতি কমানো, জনগণের প্রত্যাশা পূরণ খুবই চ্যালেঞ্জিং। এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করে এগুলোকে ধীরে ধীরে কমিয়ে এনে দেশের অর্থনীতিকে স্মুথ করা। পরিচ্ছন্নভাবে দেশ পরিচালনা করা, যে অস্থিরতাগুলো আছে, সব কিছু যেন জনবান্ধন হয়, দেশের জন্য টেনসই হয় সে বিষয়গুলো এবারে বাজেটে প্রতিফলিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, অতীতের মতো এবারও জনবান্ধন বাজেট আসবে। আর আওয়ামী লীগ সভাপতি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই আজকের এই পর্যায়ে এসেছেন এবং দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আগামী দিনের বাজেট-আমি মনে করি, দেশ এবং আন্তর্জাতিকভাবে অর্থনীতির ওপর নানা অভিঘাত, যুদ্ধ, স্যাংসন, দেশের মধ্যে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় সমস্ত কিছু বিবেচনায় নিয়ে নিশ্চয়ই অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখার জন্য মানুষ শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখবে এবং সে আস্থা এবং বিশ্বাসে ভর করে বঙ্গবন্ধু কন্যা অবশ্যই জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য, অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখার জন্য জনবান্ধব বাজেট দেবেন বলেই আমরা প্রত্যাশা করি। একইকথা বলেছেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর। তিনি বলেন, প্রতিটি বাজেট বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ্য থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক। তবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং অস্থিরতা কাটিয়ে বার বার শেখ হাসিনা সরকার সফলতার পরিচয় দিয়ে আসছে। এবারও বাজেটে সব কিছু জনবান্ধব প্রতিফলিত হবে। বাজেটে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে তা একমাত্র আওয়ামী লীগই মোকাবিলা করতে সক্ষম।
প্রসঙ্গত, আগামী ৬ জুন (২০২৪-২০২৫) অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ ও রাজস্ব আদায়ের বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। যা হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আকারের বাজেট।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
বাজেটকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ
- আপলোড সময় : ০৪-০৬-২০২৪ ০৮:২৫:১৩ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৫-০৬-২০২৪ ১০:০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন
বাজেটকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ